Tuesday, July 17, 2012

গ্রাম সরকার


গ্রাম সরকার কি ?
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার প্রথম ধাপ হলো গ্রাম সরকার৷ গ্রাম সরকার দেশের প্রত্যেক ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডে প্রতিষ্ঠিত হবে৷ একজন গ্রাম সরকার প্রধান, একজন উপদেষ্টা ও ১৩ জন সদস্য (মোট ১৫জন) নিয়ে গ্রাম সরকার ব্যবস্থা গঠিত হবে৷ প্রত্যেক ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য গ্রাম সরকারের প্রধান ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্ট মহিলা সদস্য হবেন গ্রাম সরকারের উপদেষ্টা৷ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত মেম্বার পদাধিকার বলে গ্রাম সরকারের প্রধান নির্বাচিত হন৷ স্থানীয় পর্যায়ে সরকার প্রশাসনকে শক্তিশালী ও গতিশীল করার লক্ষ্যে গ্রাম সরকারের ভূমিকা অপরিসীম৷ এই গ্রাম সরকারের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য হলো গ্রামের মানুষদের আইনগত সেবা প্রদান৷ সেই লক্ষ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গ্রাম আদালত৷ নিচে আমরা গ্রাম আদালত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি৷
গ্রাম আদালতের উদ্দেশ্য 
পল্লীগ্রামে অধিকার বঞ্চিত আপামর জনগণের ন্যায় বিচার 
প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭৬ সালে গ্রাম আদালত গঠিত হয়েছে৷ গ্রাম আদালত গ্রামের মানুষের সবচাইতে কাছের আইনগত প্রতিকার পাবার আশ্রয়স্থল৷ কম খরচে কম সময়ে গ্রাম পর্যায়ে ছোটখাটো অপরাধের বিচারকার্য নিস্পত্তির জন্যই গ্রাম আদালত৷ গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ ১৯৭৬ অনুযায়ী গ্রাম আদালতের যাবতীয় কার্যক্রম প্ররিচালিত হয় ৷
গ্রাম আদালত গঠন 
গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান এবং বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষে দু'জন করে প্রতিনিধি নিয়ে অর্থাত্‍ মোট ৫ জন সদস্য নিয়ে গ্রাম আদালত গঠিত হয়৷ উভয়পক্ষের মনোনীত দু'জন বিচারকের মধ্যে একজনকে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হতে হয়৷ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন৷ যদি কোনও কারনে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনে অপারগ হন অথবা তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে তাহলে থানা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউনিয়ন পরিষদের অন্য কোনও সদস্যকে (যাকে কোনও পক্ষ মনোনীত করেনি) গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান মনোনীত করেন৷ যদি কোনও পক্ষ ইউনিয়ন পরিষদের কোনও সদস্যকে পক্ষপাতিত্বের কারণে মনোনীত করতে না পারেন তাহলে চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে অন্য কোনও ব্যক্তিকে গ্রাম আদালতের সদস্য করা যাবে৷

গ্রাম আদালতের এখতিয়ার 
গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ ১৯৭৬ অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম আদালতে ফৌজিদারী ও দেওয়ানী এ দু'প্রকার মামলার বিচার হতে পারে৷

ফৌজদারী বিষয়সমূহ 
§ বেআইন জনতার সদস্য হওয়া বা দাঙ্গা-হাঙ্গামায় লিপ্ত (বে-আইনী) জনতার সদস্য সংখ্যা ১০ বা তার কম হতে হবে (ধারা ১৪৩ ও ১৪৭ দঃ বিঃ), সাধারণ আঘাত, অপরাধজনক অনধিকার প্রবেশ, ক্ষতিকারক কাজ, ক্ষতির পরিমাণ সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকা (ধারা ৩১২, ৪২৭ ও ৪৪৭ দঃ বিঃ) হাতাহাতি, বে-আইনি অবরোধ, অবৈধ শক্তি প্রয়োগ, অবৈধ ভয়ভীতি প্রদর্শন, মাদকাসক্তি, ইঙ্গিতের মাধ্যমে নারীর শ্লীলতাহানি ইত্যাদি (ধারা ১৬, ৩৩৪, ৩৪১, ৩৪২, ৩৫৮, ৫০৪ (১ম ভাগ), ৫০৮, ৫০৯ ও ৫১০ দঃ বিঃ); § সকল ধরনের চুরি (চুরিকৃত মূল্যের পরিমাণ ৫,০০০ টাকা বা তার কম হলে (ধারা ৪৭৯, ৩৮৫ ও ৩৮১ দঃ বিঃ); § অস্থাবর সম্পদ আত্মসাত, বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা, দলিলাদির ধ্বংস সাধন (ধারা ৪০৩, ৪০৬, ৪১৭ ও৪২০ দঃ বিঃ)৷

দেওয়ানী বিষয়সমূহ 
§ চুরির টাকা আদায়ের মামলা § অস্থাবর সম্পত্তি উদ্ধার বা তার মূল্য আদাযের মামলা § দখল হারানোর এক বছরের মধ্যে স্থাবর সম্পত্তি দখল উদ্ধারের মামলা § ধ্বংসকৃত অস্থায়ী জিনিসপত্রের ক্ষতিপূরন আদায় সংক্রান্ত মামলা § গবাদি পশুর অনধিকার প্রবেশের জন্য খেসারতের মামলা § কতগুলো ক্ষেত্রে গ্রাম আদালত বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারে না, যেমন -     - অভিযুক্ত ব্যক্তি পূর্বে যদি কোনও উচ্চতর আদালত কর্তৃক দন্ডিত হয়ে থাকে     - যদি অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির সম্পত্তি জড়িত থাকে     - বিদ্যমান কলহের ব্যাপারে কোনও সালিসের ব্যবস্থা করা হলে     - সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা কার্যরত কোনও সরকারী কর্মচারীর পক্ষ হয়ে থাকলে৷
অনেকে গ্রাম আদালত এবং সালিসী ব্যবস্থাকে এক করে ফেলে৷ গ্রাম আদালত এবং সালিসী ব্যবস্থা দু'টি ভিন্ন জিনিস৷ গ্রাম আদালতে দেওয়ানী এবং ফৌজদারী দুই ধরনের বিচার করার ক্ষমতা রয়েছে৷ কিন্তু সালিসী ব্যবস্থায় শুধুমাত্র পারিবারিক সমস্যার (যেমন - ভরণপোষন, দেনমোহর, বহুবিবাহ ইত্যাদি) সমাধান করা হয়৷ সালিসী ব্যবস্থা যে কোন ব্যক্তি বা যে কোন সংস্থা করতে পারে৷

কোর্ট ফি : 
গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট মামলার আবেদন পত্র দায়ের করতে হবে৷ ফৌজদারী মামলা হলে দু'টাকার এবং দেওয়ানী মামলা হলে চার টাকা ফি লাগবে৷ দরখাস্তের সাথে ফি প্রদানের রসিদ দাখিল করতে হবে৷


গ্রাম আদালতের স্থান নির্বাচন
যে ইউনিয়নে এলাকার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সে ইউনিয়নে গ্রাম আদালত গঠিত হয়৷ একটি ইউনিয়ন এলাকায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিন্তু বিবাদী অন্য ইউনিয়নের হলে স্ব-স্ব ইউনিয়ন হতে সদস্য মনোনয়ন দিতে পারেন৷


গ্রাম আদালতের ক্ষমতা 
গ্রাম আদালত সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায়ের মামলা করতে পারে৷ দু'টি ক্ষেত্রে গ্রাম আদালত জরিমানা করতে পারে
প্রথমতঃ গ্রাম আদালত অবমাননার দায়ে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা জরিমানা৷
দ্বিতীয়তঃ রাষ্ট্রীয় গোপনীয় নয় এমন দলিল দাখিল করতে অস্বীকার বা সমন দিতে অস্বীকার করলে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা জরিমানা করতে পারে৷

গ্রাম আদালতের কার্যপদ্ধতি
গ্রাম আদালত কর্তৃক বিচারযোগ্য দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রে ৪ টাকা ও ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে ২ টাকা ফি দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট বিচার প্রার্থী আবেদন করতে পারে৷ আবেদনপত্রে নিম্নে বর্ণিত বিবরণাদি থাকতে হবে: 
§ ইউনিয়ন পরিষদের নাম § আবেদনকারীর নাম ও ঠিকানা § বিবাদীর নাম ও ঠিকানা § ইউনিয়ন পরিষদের নাম, যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে § সালিশের সংক্ষিপ্ত বিবরণ৷


গ্রাম আদালতের বিচার পদ্ধতি : 
§ আবেদনপত্র গৃহীত হলে তা ১ নম্বর ফরমে লিপিবদ্ধ করতে হয়৷ অভিযোগ অমূলক মনে হলে চেয়ারম্যান আবেদন নাকচ করে দিতে পারেন৷ নাকচের আদেশ অন্যায়ভাবে করা হলে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তি ৩০ দিনের মধ্যে সহকারী জজ/ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট পুনঃবিবেচনার জন্য আবেদন করতে পারেন৷ § আবেদন গৃহীত হলে নির্দিষ্ট তারিখ ও সময়ে বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষকে উপস্থিত হতে চেয়ারম্যান সমন দেবেন৷ সমন ব্যক্তিগতভাবে জারি করতে হবে, সমনের উল্টো পৃষ্ঠায় সমন প্রাপকের প্রাপ্তি সূচক স্বাক্ষর নিতে হবে৷ বিবাদীকে পাওয়া না গেলে সমনের এক প্রস্থ তার বাড়ির প্রকাশ্য স্থানে টানিয়ে দিতে হবে এবং তাতে সমন জারি হয়েছে বলে গণ্য হবে৷ § সমন জারি এক সপ্তাহের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাদী এবং বিবাদী উভয় পক্ষকে তাদের সদস্য মনোনীত করতে বলবেন এবং মনোনীত সদস্য নিয়ে আদালত গঠিত হবে৷ আদালত গঠিত হওয়ার ৩ দিনের মধ্যে প্রতিপক্ষকে লিখিত আপত্তি দাখিল করতে বলবেন৷ লিখিত না দিলে মৌখিকভাবে বলতে বা তা লিপিবদ্ধ করতে হবে৷ নির্দষ্ট দিনে আদালত বিচারে বসবে৷ শুনানি ৭ দিনের বেশি স্থগিত রাখা যাবে না৷ § আবেদনকারী নির্ধারিত তারিখে হাজির হতে ব্যর্থ হলে চেয়ারম্যান যদি মনে করেন আবেদনকারী অবহেলা করছে তাহলে তিনি আবেদন নাকচ করতে পারেন৷ § নাকচের ১০ দিনের মধ্যে পুনঃবহাল করে মামলার তারিখ নির্দিষ্ট করবেন৷ § অনুরূপভাবে বিবাদী অবহেলা করে অনুপস্থিত থাকলে চেয়ারম্যান মামলার শুনানি নিষ্পত্তি করবেন৷ এক্ষেত্রে ১০ দিনের মধ্যে বিবাদী আবেদন করলে মামলাটি পুনঃবহাল করে শুনানির জন্য তারিখ ধার্য করবেন৷


গ্রাম আদালতের সিদ্ধান্ত 
গ্রাম আদালতের রায় প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে হবে৷ সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত বা চার পঞ্চমাংশ ভোটে গৃহীত হলে তার বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে না৷ যদি দু-তৃতীয়াংশ ভোটে সিদ্ধান্ত হয়, তার বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে৷ সিদ্ধান্ত ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে যে কোনও পক্ষ ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে থানা ম্যাজিস্ট্রেট এবং দেওয়ানী মামলার মামলার ক্ষেত্রে সহকারী জজ (মুন্সেফ) এর আদালতে আপীল করতে পারবেন৷


জরিমানা আদায় 
আদালত অবমাননা ও ইচ্ছাকৃতভাবে সমন অমান্য করার জন্য জরিমানা হলে অথবা জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে অস্বীকার করলে নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হবার পর তথ্য উল্লেখ করে থানা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠালে তিনি তার নিজের কোর্টের রায় মনে করে তা আদায় করে দেবেন এবং অনাদায়ে জেল/জরিমানা হতে পারে৷ ক্ষতিপূরণের টাকা নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পর
 বকেয়া টাকা হিসাবে আদায় করা হবে৷

15 comments:

  1. I have read your blog its very attractive and impressive. I like it your blog.

    Java Training in Chennai Core Java Training in Chennai Core Java Training in Chennai

    Java Online Training Java Online Training JavaEE Training in Chennai Java EE Training in Chennai

    ReplyDelete
  2. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  3. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  4. Wonderful thanks for sharing an amazing idea. keep it...

    Looking for Data Stage Training in Bangalore, learn from Softgen Infotech provide Data StageTraining on online training and classroom training. Join today!

    ReplyDelete
  5. This is really a nice and informative, containing all information and also has a great impact on the new technology. Check it out here:ajkermobile

    ReplyDelete
  6. This is really a nice and informative, containing all information and also has a great impact on the new technology. Check it out here:ajker mobile

    ReplyDelete
  7. This is really a nice and informative, containing all information and also has a great impact on the new technology. Check it out here:ajker mobile

    ReplyDelete
  8. Movie review website Tamilrockers
    My name is Ankit dalal

    ReplyDelete
  9. Bangladesh is a country of South Asia. It's intense man.

    ReplyDelete
  10. ব্লগারের সকল থিম ফ্রিতে ডাউনলোড করতে ভিজিট করুন এথানেঃ Blog Templates.

    ReplyDelete